জনম জনম

ঢাকা শহর হলো অদ্ভুত শহর। এই শহর হঠাৎ মানুষ গিলে খেয়ে ফেলে। আর খোঁজ পাওয়া যায় না। 

দ্বিতীয়জন

- তোমার এতো কিছু মনে থাকে?
- হ্যাঁ থাকে। কারণ স্মৃতি রোমন্থন করা ছাড়া তো আমার আর কিছু করার নেই। তুমি যখন অফিসে চলে যাও সারাদিন আমি কি করি যানো? সারাদিন আমি ভাবি আমি কবে তোমাকে কি বলেছিলাম এবং তার উত্তরে তুমি আমাকে কি বলেছিলে। I play the same old record again and again, again and again, again and again and again.
- পুরনো রেকর্ড বাজাতে ভালো লাগে?
- কি করব বলো আমার তো কোনো নতুন রেকর্ড নেই। আচ্ছা জরী তোমার কি মনে আছে তুমি প্রায় প্রতি রাতেই আমায় বলতে আমৃত্যু আমার সঙ্গে থাকবে। বলতে না?
- বলতাম।
- তুমি কি সত্যি সত্যি আমৃত্যু আমার পাশে থাকবে?
- আমি কি তাই নেই?
- তুমি প্রশ্নের উত্তর ঠিক মতো দিচ্ছ না। তুমি দশ বছর ধরে আমার সঙ্গে আছো একথা ঠিক। কিন্তু আমি জানতে চাচ্ছি তুমি কি আমৃত্যু আমার পাশে থাকবে?
- কথার পিঠে কথা আমার ভালো লাগছে না। আমার খুব ক্ষিদে লেগেছে।

নীতু তোমাকেই ভালোবাসি

- কই যাও গো রহিমা রানী?
-যহন-তহন রাণী ডাইকেন না মোবারক ভাই। কহন কে কোন দিক দিয়া শুনবো!
- রাণীরে রাণী না ডাইকা, কি ডাকবো? রাণীরে তো আর চাকরানী ডাকোন যায় না। তোমারে খুব বিউটি লাকতেছে। গালের তিলটা তো আগে দেখি নাই। মুখে হাসি কেন গো রহিমা রাণী?
- ছুডু আফার মোহোব্বতের মানুষরে দেখলাম সুন্দর আছে। খালি নাকটা মোডা। আফনের নাক ঠিকোই আছে। চিক্কোন চাক্কোন। চুইট।
- না সাইডে একটু মোডা।
- নেন পান খান।

সকল কাঁটা ধন্য করে

সকল কাঁটা ধন্য করে

মাসের শেষ সপ্তাহে ঢাকা শহরে খাট, মিটসেফ, চেয়ার-টেবিল এবং লেপ-তোষক বোঝাই করে কিছু ঠেলাগাড়ি চলাচল করে। ঠেলাগাড়ির পেছনে পেছনে একটা রিকশায় বসে থাকেন এইসব মালামালের মালিক। তাঁর কোলে থাকে চাদরে মোড়া বার ইঞ্চি ব্ল্যাক এন্ড হোয়াইট টিভি কিংবা টু-ইন-ওয়ান। তাকে খুবই ক্লান্ত ও উদ্বিগ্ন মনে হয়, কারণ একইসঙ্গে তাকে লক্ষ্য রাখতে হচ্ছে ঠেলাগাড়ির দিকে এবং তার কোলে বসানো পরিবারের সবচে মূল্যবান সামগ্রীটির দিকে। তাকে খুব অসহায়ও মনে হয়। অসহায়, কারণ এই মুহূর্তে তার কোন শিকড় নেই। শিকড় গেড়ে কোথাও না বসা পর্যন্ত তার অসহায় ভাব দূর হবে না। মানুষের সঙ্গে গাছের অনেক মিল আছে। সবচে বড় মিল হল, গাছের মত মানুষেরও শিকড় আছে। শিকড় উপড়ে ফেললে গাছের মৃত্যু হয়, মানুষেরও এক ধরনের মৃত্যু হয়। মানুষের নিয়তি হচ্ছে তাকে

মেঘের ছায়া

শুভ্র তার চশমা খঁজে পাচ্ছে না। বিছানার পাশে রেখে সে বাথরুমে ঢূকেছিল চোখে পানি দিতে। বাথরুম থেকে বের হয়ে সে গেল বারান্দায়। বারান্দায়-এ মাথা থেকে ও-মাথা পর্যন্ত দ’বার হাঁটল। ঠিক সন্ধ্যায় চশমা ছাড়া পৃথিবীকে দেখতে ভাল লাগে। চারদিকে অন্ধকার। এই অন্ধকারে বাতি জ্বলে উঠেছে। চশমা ছাড়া এই বাতিগুলিকে অনেক উজ্জল মনে হয়।

শুভ্রর ইচ্ছে করছিল আরো খানিক্ষণ হাঁটতে, কিন্তু সময় নেই। আজ জাহেদের বিয়ে। সন্ধ্যা মেলাবার পর বরযাত্রী রওনা হবে। শুভ্র বরযাত্রীদের একজন। সে মাইক্রোবাস নিয়ে যাবে। তার দেরী করার সময় নেই। শুভ্র ঘরে ঢুকল। চশমা খুঁজে পেল না। বিছানার পাশে এই সপ্তাহের টাইম পত্রিকার পাতা খোলা অবস্থায় আছে। পত্রিকার পাশে একপাশে এক প্যাকেট ক্যাসো নোট। প্যাকেট খোলা হয়নি। বালিশের নিচে তার নোটবুক এবং পেন্সিল। সবই আছে, চশমা নেই। শুভ্র তার শরীরে একধরনের কাঁপুনি অনুভব করল। চশমা হারালে তার এমন হয়। মাঝে মাঝে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে। নিজেকে এত অসহায় লাগে! মনে হয় অচেনা অজানা দেশের হাজার হাজার মানুষের মাঝখানে সে হারিয়ে গেছে। চোখে দেখতে পারছে না, কথা বলতে পারছে না। শুধু বুঝতে পারে অসংখ্য মানুষ পাশ কাটিয়ে যাচ্ছে। সে যেমন ওদের দেখতে পাচ্ছে না, ওরাও তাকে দেখতে পারছে না। সে ওদের কাছে অদৃশ্য মানব।

-মেঘের ছায়া, হুমায়ূন আহমেদ

জনম জনম

বাংলাদেশী মেয়েরা সামাজিক অমর্যাদার বিষয়ে খুব সেনসেটিভ।
-জনম জনম; হুমায়ূন আহমেদ

হুমায়ূন আহমেদের প্রেমের গল্প

হঠাৎ- হঠাৎ এক-একদিন আমাদের কত পুরনো কথা মনে পড়ে। বুকের ভেতর আচমকা ধাক্কা লাগে। চোখে জল এসে পড়ে।
-হুমায়ূন আহমেদের প্রেমের গল্প

জনম জনম

খুব যারা বড় মানুষ তারা কাউকে অপমান করে না। তারা খুব মিষ্টি মিষ্টি করে কথা বলে। অভাবী মানুষের কথা শুনলে আবেগে আপ্লত হয়ে যায়।
-জনম জনম; হুমায়ূন আহমেদ

সৌরভ

-লেখো, মাননীয় সংসদ সদস্য জনাব, হাজী আবদুস সালাম। বিষয়ঃ- ঘুষখোর ওসি বদলীর আবেদন।
- স্যার আমি তো শুনছি এই ওসি ভালা মানুষ। ঘুষ খায় না।
- ঘুষ খায় না? আরে বড় মাছ যে হাসতে হাসতে নিয়া যায় সে ঘুষ খায় না? মাছ কি ঘুষের মধ্যে পড়ে না?
লেখো, বর্তমান ওসির যন্ত্রণায় আমরা অতিষ্ঠ এবং দিশাহারা।
- স্যার অতিষ্ঠ বানান কি?
- অতিষ্ঠ বানান কি সেটা তো আমার জানার কথা না। তোমার জানার কথা! তুমি বি এ পাশ করছো না? ও নকল কইরা পাশ করছো।
লেখো, এই ওসি অতি দুষ্ট প্রকৃতির এবং তার চরিত্রে ও সমস্যা আছে।
- কি সমস্যা?
- আরে কি সমস্যা সেটা পরে খুইজা বাইর করবো। লেখো।

(সৌরভ)

জনম জনম

বাড়ী থেকে পালালে অভিজ্ঞতা হয়। নানান ধরনের মানুষের সঙ্গে মেশা যায়।
-জনম জনম; হুমায়ূন আহমেদ

মিসির আলি Unsolved

দুনিয়াটিই তো খেলা। বিরাট খেলা। ক্রিকেট খেলা। কেউ সেঞ্চুরি করতেছে, কেউ শূন্য পেয়ে আউট। আবার কেউ ব্যাটিং করার সুযোগ পায়না। না খেলেই আউট।
-মিসির আলি Unsolved; হুমায়ূন আহমেদ

জনম জনম

সব খারাপ জিনিসের একটা ভালো দিক আছে। ইংরেজীতে একটা কথা আছে না - এভরি ক্লাউজ হ্যাজ এ সিলভার লাইনিং।
-জনম জনম; হুমায়ূন আহমেদ

মেঘ বলেছে যাব যাব

হাসানদের স্থায়ী কাজের মহিলা কমলার মা'র সঙ্গে ঠিকা কাজের মহিলা ফুলির মা'র প্রতিদিন সকালে একটা ঝগড়া শুরু হয়। ফুলির মা ঠিক ন'টার সময় আসে। কমলার মা নীচু গলায় ঝগড়া করলেও ফুলির মার গলা কাকতাড়ুয়া গলা। সে চিৎকার শুরু করলে আশেপাশের কাক উড়তে থাকে। হাসানের ভাবী রীনা যদি বলে- "ফুলির মা চুপ করতো।"

ফুলির মা'র গলা আরো এক ধাপ উঠিয়ে বলে- "আফা আমরে না। ধুমসি কাইলা মাগিরে চুপ করতে কন। হের গলা পাও দিয়া চাইপ্যা ধরেন।"

রীনা বলে- "ফুলির মা মাগি ফাগি বলবে না।"

"মাগিরে মাগি বলবোনা তো ছাগি বলবো? মাগিরে ছাগি বললে ছাগিরে কী বলবো? বোতল বলবো?  আপনেই বলেন, আপনের বিচার কী হুনি!"

রীনা বলে- "চুপ কর।"

ফুলির মা বলে "আপনে চুপ করেন। অত গরম ভালা না। ফুলির মা গরমের ধার ধারে না।"

প্রতিদিনই একবার ঠিক করা হয় ফুলির মাকে তার পাওনা গন্ডা মিটিয়ে বিদায় করে দেয়া হবে। বিদায় করা হয়না। কারণ ফুলির মার কর্মক্ষমতা অসাধারণ। ঝগড়া করতে করতেই সে বাসনকোসন মেজে ঝকঝকে করে ফেলবে, ঘর ঝাঁট দেবে, কলঘরে রাখা দুই বালতি কাপড় ধুয়ে চিপে দড়িতে শুকাতে দেবে।
এমন একজন কাজের মানুষকে শুধুমাত্র কেউ ঝগড়া করার কারণে বিদায় করে না।মানুষ এত বোকা না।

-মেঘ বলেছে যাব যাব; হুমায়ূন আহমেদ

সে ও নর্তকী

নগ্নতা তো কোনো লজ্জার বিষয় হতে পারে না।লজ্জার বিষয় হলে প্রকৃতি আমাদের কাপড় পরিয়ে পৃথিবীতে পাঠাত।
-সে ও নর্তকী; হুমায়ূন আহমেদ

নিশিথিনী

আমরা বেঁচে থাকি বর্তমানকে নিয়ে। অতীতের কথা আমাদের কিছু মনে থাকে না।
-নিশিথিনী; হুমায়ূন আহমেদ

কুটু মিয়া

এই জগতে যত কম জানা যায়, ততই ভালো।
-কুটু মিয়া; হুমায়ূন আহমেদ

মিসির আলি Unsolved

আমার Unsolved ফাইলটি নিয়ে আমি প্রায়ই বসি। রহস্যের কিনারা করা যায় কিনা তা নিয়ে ভাবি। এখনও হাল ছাড়ি নি। হাল ধরে বসে আছি। অকূল সমুদ্র। নৌকা কোন দিকে নিয়ে যাব বুঝতে পারছিনা।
-মিসির আলি Unsolved, হুমায়ূন আহমেদ

হিমু

মানুষ মো‌টেই Rational প্রাণী নয়। সমস্ত পশুপা‌খি, কীটপতঙ্গ Rational, মানুষ নয়। যখন বৃ‌ষ্টি হয়, পাখি তখন বৃ‌ষ্টির হাত থে‌কে বাঁচার জন্য গা‌ছের নি‌চে আশ্রয় নেয়। এর কোন ব্য‌তিক্রম নেই। মানু‌ষের ভেতর ব্য‌তিক্রম আ‌ছে। এ‌দের কেউ-কেউ ইচ্ছা ক‌রে বৃ‌ষ্টি‌তে ভেজে। কেউ-কেউ গা‌ছের নি‌চে দাঁড়ায় ঠিকই, কিন্তু মন প‌ড়ে থা‌কে বৃ‌ষ্টি‌তে। সে ম‌নে মনে ভিজ‌তে থা‌কে।
-হিমু, হুমায়ূন আহমেদ

কুটু মিয়া

মেয়েদের এই সমস্যা। স্থিরতা বলতে কিছু নেই। সাগরের ঢেউ- এই আছে, এই নেই।
-কুটু মিয়া

নগরে দৈত্য

- আপনার বাচ্চা পাচার হয়েছে? আপনার পরিবারের কারো না কারো এই পাচারের মধ্যে হাত আছে।
এই তুমি কে, নাম কি?
- রহিমা।
- বাপের নাম?
- সামছুল হক।
- গ্রাম?
- কিশোরগঞ্জো।
- থানা?
- কিশোরগঞ্জো।
- তুমি আন্ডার এরেস্ট।
- ভাইজান........
- চুপ। ভাইজান, এইসব ভাইজান অনেক শুনছি। বাচ্চা পারের সময় মনে ছিল না? যাও চৌদ্দ বছর ঘর থাইকা বের হইবা না।

নাটকঃ নগরে দৈত্য